এফএম-৭৮৬ ‘র নিয়মিত আয়োজন ‘নিউইয়র্ক ডায়েরি’- তে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন ইনফরমেশন টেকনোলজি স্পেশালিষ্ট এবং কমিউনিটি ডেভেলপার ‘সাইয়েদ এম আলম। সঞ্চালনায় ছিলেন আরজে আরিয়ান।
আরজে আরিয়ান: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
সাইয়েদ এম আলম: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
আজ বিশ্ব সামাজিক ন্যায়বিচার দিবস, দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে কিছু বলুন?
সাইয়েদ এম আলম: আমার কাছে মনে হয় ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকরা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছিলো বলেই কিন্তু আমরা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলাম ভাষার অধিকারের জন্য। আপনি দেখবেন গত চার বছরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে সামাজিক ন্যায়বিচার বঞ্চিত ছিলো যেমন এই আমেরিকা, তেমনি ন্যায়বিচার বঞ্চিত ছিলো পুরো বিশ্ব। আপনি দেখবেন এখানে ইংরেজির পাশাপাশি সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ হিসেবে কিন্তু ব্যবহার করা হয় স্প্যানিশ ভাষা। আমি বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে চাইবো ঘর থেকে শুরু করে দেশ বা বিশ্বের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হোক সামাজিক ন্যায়বিচার।
নিউইয়র্কে বাংলার ব্যবহার কতটা হচ্ছে?
একটা তথ্য সকলের জানা উচিত এই নিউইয়র্ক-এ আপনি চাইলে চুয়াল্লিশটি স্টেট এজেন্সিতে বাংলায় কথা বলতে পারবেন। আর হ্যাঁ এখানে আমাদের সেকেন্ড জেনারেশনকে আমি বলি বাংলিশ। দেখুন এখানে ওরা স্কুলে সারাদিন ইংরেজিতে কথা বলে। বাসায় এসে বাংলা বলতে শিখতে স্ট্রাগল করে। তবে আমরা যদি এই সেকেন্ড জেনারেশন’র মাঝে বাংলার বীজ বপন করতে না পারি আমরা তাহলে কিন্তু আমাদের থার্ড জেনারেশন’র মাঝে বাংলার অস্বিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। আমি অনেক ক্ষেত্রে খুব কস্ট পাই কারো বাসায় গেলে যখন দেখি সে তার সন্তানদের সাথেও ইংরেজিতে কথা বলে। বাবা-মা’দের আরও সচেতন হওয়া উচিত। আমার মনে হয় অনলাইনে সাপ্তাহিক বা পাক্ষিকভাবে বাংলা শেখানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা বেশ কার্যকরী হবে।
নিউ জেনারেশনে বাংলার ব্যবহার বাড়াতে করণীয় কি?
আমরা যদি আমাদের কালচারটাকে ধারন করে মেইনস্ট্রিম এ আসতে পারি তাহলে কিন্তু আমাদের কালচার ছড়িয়ে দিতে পারবো। দেখুন,এখন তো ইন্টারনেটের যুগ। ইউটিউবে কিন্তু ভালো অনেক ডকুমেন্ট আছে বাংলায়, কিংবা আমাদের ছোটবেলায় দেখতাম বিটিভিতে অনেক নাটক প্রচার হতো যেগুলো আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ছিলো। আমি মনে করি এই ডকুমেন্টরিগুলো কিংবা ভালো-ভালো বাংলা নাটকগুলো যদি ইংরেজি সাবটাইটেল দিয়ে এই জেনারেশন এর কাছে তুলে ধরতে পারি তাহলে আশা করছি আমরা এই প্রজন্মের মাঝে বাংলা ছড়িতে দিতে পারবো।
নিউইয়র্কের সর্বশেষ আপডেটগুলো জানতে চাই?
এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু আমাদের গভর্ণর অ্যান্ডু কুমো। তাকে দোষারোপ করা হচ্ছে করোনাকালীন মোট মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ না করার জন্য। তবে আমি মনে করি এটা পলিটিক্যাল। আপনি টেক্সাসের অবস্থা দেখেন, কি ভয়াবহ অবস্থা। সেক্ষেত্রে আমাদের গভর্ণর যথেষ্ট সফল ভাবেই কিন্তু করোনা মহামারীর পথটা পাড়ি দিয়েছেন। আর হ্যাঁ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন জুলাই এর মাঝে সকলের জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত হবে। ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট-২০২০ কিন্তু এখন টক অব দা কান্ট্রি। এটা অলরেডি সাবমিটেড। এটা একটা আম্রেলা। যার ভেতরে অনেকগুলো ছোট ছোট বিল আছে। আপনারা জানেন ওবামা প্রশাসন কিন্তু চেয়েছিলো ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা সংস্কার করার জন্য। ২০২০ সালের জানুয়ারির আগ পর্যন্ত যারা এখানে ছিলেন বিশেষ করে যারা সরাসরি প্যানডামিক সিচুয়েশনে আমেরিকান ইকোনোমির জন্য কাজ করেছেন তারা কিন্তু সকলেই সিটিজেনশিপ পাবেন তিন বছরের মধ্যেই। আর বাকি অন্য সবাই যারা এখানে ৮ বছর অবস্থান করছে তারা সবাই সিটিজেনশিপ পাবেন। ম্যাক্সিকান বর্ডারে যে পচিশ হাজার শরণার্থী রয়েছে যারা অ্যাসাইলাম প্রত্যাশি তাদের জন্যও কিন্তু সুখবর রয়েছে। আরেকটা বিষয় ব্যবহার করতো ট্রাম্পের সময়টাতে নন সিটিজেনদের কে বলা হতো এলিয়েন। যেটা অসম্মানজনক ছিলো। এই প্রশাসন এই অবসম্মানজনক শব্দটা তুলে সিটিজেন বা নন সিটিজেন শব্দটা ব্যবহার করবে। আগে ডাইভারসিফাইভ ভিসা ছিলো পঞ্চান্ন হাজার, যেটা এখন বাড়িয়ে করা হবে আশি হাজার।
আর কি কি পরিবর্তন হতে পারে?
জো বাইডেন কিন্তু ঘোষণা দিয়েছে ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’। জলবায়ু চুক্তিতে গিয়েছে আমেরিকা। ইরানের বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। সবমিলিয়ে একটা পজিটিভ পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে।
জাতিসংঘের সামনে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ হচ্ছে না কেন?
আসলে এটার দায়ভার আমাদেরই। সঠিক জায়গাতে আমাদের যোগাযোগের অভাব আছে বলে আমার মনে হয়। আমাদের অ্যাম্বাসিগুলো যদি এটা নিয়ে কাজ করতো তাহলে আমরা নিশ্চয় আরো আগেই এটা করতে পারতাম। তবে আশা করছি খুব দ্রুতই আমরা নিউইয়র্ক-এ জাতিসংঘের সামনে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারবো।